আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতু
আলহামদুলিল্লাহ, প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা,
আপনারা সকলেই জানেন যে আল্লাহ তায়ালা কোরআন এ বলেছেন প্রত্যক প্রানী কে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে,,
রাসুল সাঃ তিনিও ছিলেন আল্লাহর এক শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। একজন নবী ও রাসুল,,
উনিও কিছুক্ষনের জন্য মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করেছেন,,
কেননা কোরআন এ বলা হয়েছে
প্রত্যক প্রানী কে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে,,।
তবে উনার মৃত্যু ছিল মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য, যা হাদিস দ্বারা প্রমানিত,,
আগামী পোস্টে সেই বিষয় নিয়ে পোস্ট করব ইনশাআল্লাহু আজ্জা ওয়াজাল,
মৃত্যুর পর আমাদের সকলেরই জানাযা একজন ইমামের মাধ্যমে সংঘটিত হয়,,
উম্মতে মোহাম্মাদীর সকলকেই চার তাকবীরের সাথে এক ইমামের পিছেন ইক্বতাদা করে জানাযার নামায পড়ানো হয়। এতে তিনটি অংশ আছে। যথাঃ- আল্লাহর সানা, নবী করিম [ﷺ]-এঁর উপর দরুদ শরীফ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য আম দোয়া। এটাকে নামায বলা হয় এজন্য যে, এতে ইমাম ও মোক্বতাদী আছে। শরীর পাক হতে হয়। কিবলামুখী হতে হয়। নাভীতে হাত বাঁধতে হয়। শুধু রুকু, সিজদা, বৈঠক ও ক্বিরাত নেই এবং তাশাহুদও পড়তে হয় না। তবু এটাকে নামায বলা হয় এজন্য যে, মূর্দাকে সামনে রেখে কেবলামুখী হয়ে হাত বেঁধে ইমামের পিছনে ইক্বতাদা করতে হয়। এতেই প্রমাণিত হয় যে, জানাযা হলো নামায। শুধু দোয়া হলে এসব করতে হতনা। এর একটি অংশ মাত্র দোয়া
এজন্য হাদীস অনুযায়ী জানাযা নামাযের পরপরই সকলে গোল হয়ে আর একবার দোয়া করা হয় হাত তুলে। তৃতীয়বার দোয়া করা হয় মাটি দেয়ার পর। মিশকাত শরীফে আছে “আক্ছিরোদ্ দোয়া লিল্ মাইয়িতি” অর্থাৎ “তোমরা মৃত ব্যক্তির জন্য বেশী করে দোয়া কর।” বেশী অর্থ - ন্যূনতম তিনবার দোয়া করা। অপর হাদীসে এসেছে “ইজা সাল্লাইতুম আলাল মাইয়েতে, ফা-আখ্লিছু লাহুদ্দোয়া” অর্থাৎঃ- “যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযা আদায় করবে, তার পরপরপই বিনা বিলম্বে আর একবার খাছ দোয়া করবে” (মিশকাত কিতাবুল জানায়েয)। মুসলমানগণ এভাবেই আমল করে আসছেন। এটা হলো সাধারণ মৃত ব্যক্তিদের কথা। (জানাযার পর দোয়া সম্পর্কে আমার লিখিত ফতোয়া ছালাছা পাঠ করুন)।
হুযুরের জানাযার ধরণঃ
নবী করিম [ﷺ]-এঁর ক্ষেত্রে জানাযার বিশেষ ধরণের বৈশিষ্ট্য ছিল। হুযুর [ﷺ]এর বেলায় কোন ইমাম ছিলো না। মোক্বতাদীও ছিলো না। কেবলামুখী হওয়াও ছিলো না। হাদীস শরীফে শুধু সালাত শব্দের উল্লেখ আছে। এখানে সালাত অর্থ দোয়া ও দরূদ। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এঁর প্রতি নবী করিম [ﷺ] যে অসিয়ত করে গেছেন, সে অনুযায়ী সাহাবীগণ নবী করিম [ﷺ]-এঁর হুজরা মোবারকে প্রবেশ করে রওযা মোবারকের কিনারায় রক্ষিত খাটের কাছে গিয়ে দরূদ ও সালাম পেশ করে বের হয়ে আসতেন। একদল বের হওয়ার পর আর এক দল প্রবেশ করতেন এবং দরূদ ও সালাম পেশ করতেন। এভাবে প্রথমে পুরুষগণ, তারপর মহিলাগণ, তারপর ছোট ছোট বালকগণ, তারপর আশ্রিত দাস-দাসীগণ ও মাওয়ালীগণ ব্যক্তিগতভাবে হুজরায় প্রবেশ করে দরূদ ও সালাম পেশ করেছিলেন। সাধারণ জানাযা নামায হলে মহিলাগণ অংশগ্রহণ করতে পারতেন না।
আল্লামা সোহায়লী (রাহঃ) বলেন - আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদের সুরা আহযাবে যেভাবে দরূদ ও সালাম পড়ার জন্য মু’মিনগণকে নির্দেশ করেছেন, ইন্তিকালের পরও অনুরূপভাবেই শুধু দরূদ ও সালাম পেশ করা হয়েছিল (বেদায়া ও নেহায়া ৫ম খ- ২৬৫ পৃষ্ঠা)।
মাওয়াহিব-লাদুন্নিয়া গ্রন্থে আল্লামা শিহাবুদ্দিন কাসতুলানী শারেহে বোখারী (রাহঃ) উল্লেখ করেছেনঃ-
ومن خصا ئصه صلى الله عليه وسلم انه صلي علبه الناس افواجا افواجا بغير امام وبغير دعاء الجنازة المعروف ذكره البوهقي وغيره ـ
অর্থঃ- ”নবী করিম [ﷺ]-এঁর অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটিও একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল যে, লোকেরা দলে দলে এসে ইমাম ছাড়াই দরূদ পাঠ করতেন। তাঁরা প্রচলিত জানাযার দোয়া ও তাকবীর পড়েননি। ইমাম বায়হাকী ও অন্যান্য মোহাদ্দিসগণ এরূপই বর্ণনা করেছেন” (আন্ওয়ারে মুহাম্মদীয়া মিন মাওয়াহিব লাদুন্নিয়া পৃষ্ঠা ৩২০। হুযুর [ﷺ] হায়াতুন্নবী, সেজন্যই প্রচলিত জানাযা হয়নি।
হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) কর্তৃক জানাযা সালাতের ধরণঃ
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) কিভাবে জানাযার পরিবর্তে শুধু দরূদ ও সালাম পাঠ করেছিলেন - তার একটি পরিষ্কার বর্ণনা আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া গ্রন্থের ৫ম খ- ২৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে। উভয় সাহাবীর আমল মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম নামে জনৈক রাবী লিখে রেখেছিলেন। ওয়াকেদী ঐ দলীলখানার ভাষ্য এভাবে বর্ণনা করেছেন
لما كفن رسول الله صلى الله عليه وسلم وضع على سريره دخل ابوبكر وعمن رضي الله عنهما ومعهما نفر من المها جرين والانصار بقدر ما يسع البيت فقالا : السلام عليك ايها النبي ورحمة الله وبر كاته وسلم المها جرون والا نصار كما سلم ابوبكر وعمر ثم صفوا صفوا صفوفالايؤمهم احد ـ فقال ابوبكر و عمر وهما فى الصف الاول حيال رسول الله صلى الله عليه وسلم اللهم انا نشهد انه قد بلغ ما انزل اليه ونصع لا مته و جا هد فى سبيل الله حتى اعز الله دينه وتمت كلمته وأومنبه وحده لاشر يك له فا جعلنا الهنا ممن يتبع القول الذي انزل معه واجمع بيننا وبينه حتى تعر فنابنا و تعر ـ تنابه فانه كان بالمؤ منين رؤوفا رحيما لانبتغي بالايمان به بديلا ونشترى بهثمناامدا فيقول الناس : امين امين ويخر جون ويدخل اخرون حتى صلى الر جال ثم النساء ثم الصبيان ـ
অর্থঃ- ”নবী করিম [ﷺ]-কে কাফন পরিধানের পর খাঁটের উপর রেখে ঐ খাঁট (হুজরার ভিতর) রওযা মোবারকের পাশে রাখা হলো। হযরত আবু বরক ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) হুজরার ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কয়েকজন মোহাজির ও আনসারকে সাথে নিয়ে প্রবেশ করলেন। তাঁরা দু’জনে প্রথমে এভাবে সালাম আরয করলেন - “আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান্নাবীউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।” হযরত আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه)-এঁর ন্যায় মোহাজির ও আনসারগণও সালাম আরয করলেন। তারপর সকলে সারি বেঁধে খাটের চতুর্দিকে দাঁড়ালেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ইমাম ছিলেন না। রাসূল করিম [ﷺ]-এঁর খাটের চতুর্পাশ্বে দন্ডায়মান কাতারগুলোর মধ্যে প্রথম কাতারে হযরত আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে এভাবে মুনাজাত করলেনঃ
“হে আল্লাহ! আমরা সাক্ষ দিচ্ছি যে, নবী করিম [ﷺ]-এঁর উপর যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে, তিনি তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। উম্মতকে তিনি উপদেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহর পথে তিনি জেহাদ পরিচালনা করেছেন।তাঁ প্রচেস্তার ফলে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করেছেন। তাঁর কলেমা পূর্ণতা লাভ করেছে। লা শারীক আল্লাহর উপর লোকেরা ঈমান এনেছে। হে আমাদের মাবুদ! তুমি আমাদেরকে তাঁর উপর অবতীর্ণ যাবতীয় বাণীর অনুসরণকারী বানিয়ে দাও। তুমি আমাদের ও উনার মধ্যে মিলন ঘটিয়ে দাও। তুমি আমাদের (কার্যকলাপের) দ্বারা যেন তাঁর পরিপূর্ণ প্রকাশ্য পরিচয় পাও এবং তাঁর মাধ্যমেও আমাদের প্রকাশ্য পরিচয় পাও। কেননা, তিনি মু’মিনদের প্রতি রউফ এবং রাহীম। তাঁর প্রতি ঈমান আনার বিনিময়ে আমরা কিছুই প্রতিদান চাইনা এবং তাঁর নাম ভাঙ্গায়েও আমরা কখনও দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিল করতে চাইনা।” কাতারে দাঁড়ানো লোকজন শুধু আমীন আমীন বলেছেন। তাঁরা বের হয়ে যাওয়ার পর অন্য একদল প্রবেশ করতেন। এভাবে প্রথমে পুরুষগণ, তারপর মহিলাগণ, তারপর শিশুগণ ক্রমান্বয়ে প্রবেশ করে সালাম ও দরূদ পেশ করেছেন। (আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া কৃত ইবনে কাছির ৫ম খ- ২৬৫ পৃষ্ঠা)।
মঙ্গলবার দিন গোসল ও কাফনের পর হতে মধ্যরাত পর্যন্ত এভাবেই পালাক্রমে দরূদ ও সালামের অনুষ্ঠান চলতে থাকে।
সুতরাং নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম বিহীন এবং চার তাকবীর বিহীন শুধু দরূদ, সালাম ও মোনাজাতের মাধ্যমেই জানাযার কাজ সমাধা করা হয়েছে।
অন্যদের বেলায় প্রচলিত জানাযার নিয়ম নবীজীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এরূপ করার অন্য একটি কারণ এও ছিল যে, নবী করিম [ﷺ] ইন্তিকাল করলেও তাঁর সাথে রুহ মোবারকে যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় নি। তাই তিনি ইন্তিকাল অবস্থায়ও ঠোঁট মোবারক নেড়ে নেড়ে ইয়া উম্মাতী! ইয়া উম্মাতী! বলে কেঁদেছিলেন। এজন্যই একথার উপর সকলে একমত পোষণ করেছেন যে, ”নবী করিম [ﷺ] হায়াতুন্নবী-জিন্দা নবী। এই ইজমার অস্বীকারকারী কাফির।” তাই তাঁর জানাযা হয়নি - শুধু সালাম ও দরূদ পড়া হয়েছে।
উক্ত হায়াত বরযখী - না দুনিয়াবী, এ নিয়ে ইখতিলাফ থাকলেও শেষ সমাধান হলো - দুনিয়াবী হায়াতেই তিনি জীবিত আছেন। (আদিল্লাতু আহলিস সুন্নাহ, শিফাউস সিক্বাম, ফতহুল বারী শরহে বোখারী, দ্বারু কুতনী, জাআল হক, খলীল আহমদ আম্বেটীর প্রতারণামূলক গ্রন্থ “আত তাসদীকাত’ এ বলা হয়েছে - নবীজী দুনিয়ার হায়াত রওযা পাকে শুয়ে আছেন)। দাফনের অধ্যায়ে হায়াতুন্নবীর প্রামাণ্য দলীল সামনেই উল্লেখ করা হবে-ইনশা আল্লাহ!
লিখার মধ্যে মধ্যে ভুল ত্রুটি হতেই পারে, টাইফিং কিছু হতে পারে,, দয়া করে না বুঝলে Contract Farom এ অথবা কমেন্ট করে বলবেন।
নয়তো ফেসবুকে
সরাসরি যোগাযোগ করুন,
⏩click me⏪
সুন্দর একটা গজল শুনুন
0 coment rios: